বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৫

অনুভূতি/স্ট্যাটাস-১


অবশেষে আবিষ্কার করলাম, আমি অটিস্টিক, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। যার যোগ্যতা বলে কিছু নেই, উপস্থিত বুদ্ধি নেই, নেই সত্য বলার সৎ সাহস। যার জীবন শুধু ব্যর্থতার নিরন্ধতায় পরিপূর্ণ। যে কিনা অনাগত ভবিষ্যতের সুখস্বপ্নে বিভোর ছিল এতদিন, আজ যার আশার আভা আঁধারে সেঁধিয়েছে।
অধ্যবসায় আর আশার মিশেলে ছোট্ট ছোট্ট শক্ত ইটের পোক্ত গাঁথুনিতে তৈরি আমার আত্মবিশ্বাসের অাকাশচুম্বি অট্টালিকা রূঢ় বাস্তবতার ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।
অাজ আমি শুধু অাবেগ সর্বস্ব এক মানুষ, যার জীবনে নেই সুস্পষ্ট লক্ষ্য, রুক্ষ রিয়েলিটির ক্রাইসিস যার জীবনটাকে মরুর বুকে মুমূর্ষু ঘোড়ার মতো মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য করেছে। সমবয়সীরা যখন আরামপ্রদ ভবিষ্যত জীবন গঠনে ব্যস্ত, তখন সামর্থ্যের সংকীর্ণতার দোহাই দিয়ে যে কিনা সুন্দরবনের সাধারণ সান্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। যে বয়সে আকাশ পানে তাকিয়ে ছেলেরা আকাশ জয়ের স্বপ্ন দেখে, সেসময় যে কিনা আকাশের বিশালতায় নিজেকে ক্ষুদ্র মনে করে। বুড়িয়ে গেছি অল্পবয়সে। শিশু আর অশীতিপর বৃদ্ধের মতো সর্বগ্রাসী মনোভাব গ্রাস করেছে আমায়। তাই ঘেণ্না করি নিজেকে, এতটা ঘেণ্না স্বয়ং শয়তানকেও করি না। ঘেণ্না করি আমার চারপাশের পরিবেশকে, যা আমার সত্য সাধনায় অন্তরায়, যেখানে আমার ইচ্ছার কদর নেই। ঘেণ্না করি বর্তমান ঘুণেধরা সমাজব্যবস্থাক; মাঝেমধ্যে মনে হয় কমিউনিস্ট হয়ে বুর্জোয়াদের ভিত্তিমূলে লাত্থি মেরে সমাজে সমতা আনি। কিন্তু লজিকের লেজুড়বৃত্তির পশ্চাতে সে সদিচ্ছা চাপা পড়ে থাকে। নিজের প্রতি তীব্র ঘৃণার কারণেই হয়তো বিশ্ব বিস্ফোরণের মতো মানসিক উত্তেজনা মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। মনে হয় নরকের কীট কিলবিল করছে মগজে। যেন পাগলা ক্লেদাক্ত কুকুরের মতো মাথায় যন্ত্রণাদগ্ধ দগদগে ঘা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, চুলকানির অভাবে যাতে মামড়ি পড়ে গেছে, চুঁইয়ে পড়ছে পূতিগন্ধময় পুঁজ। মাথা খুবলে খাচ্ছে বিক্ষিপ্ত চিন্তার ঝড়ো খরস্রোত, যার আকার বর্ণনার অক্ষমতাই হয়তো অাত্মদংশনের মুখ্য কারণ। ড. জেকিলের অদ্ভুত ঔষধের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া টের পাই ভেতরে, হয়তো বা একটু পরেই হিংস্র মি. হাইডে রূপান্তরিত হবো। অমানুষিক উত্তেজনায় চারপাশের মানুষগুলোকে জানোয়ার বলে বোধ হয়। তখন কুখ্যাত সাইকো কিলার জ্যাক দি রিপারের মতো অকারণে খুনের পৈশাচিক নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে মন। ইচ্ছে করে চারপাশের মনুষ্য পদবাচ্য পশুগুলোর ধ্বংসে প্রবৃত্ত হই। মন্দ অদৃষ্টের জন্য অন্ধ আক্রোশ জমে বিধাতার উপর। মাঝেমধ্যে মনে হয় বিধাতার কোনো কাল্পনিক কাঠামোর টুঁটি চেপে ধরি।
বেশ কিছুদিন আগে অকারণে একজন নপুংসক বলেছিল আমায়। সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ বুঝতে পারছি সে মিথ্যে বলো নি। রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াবার সৎ সাহস যার নেই, যার জীবনে কোনো উচ্চাশা নেই, বিপদ বিদীর্ণ করে সুখসম্ভোগের সদিচ্ছা যার মধ্যে অনুপস্থিত সে অস্তিত্বহীন নপুংসক বৈ আর কি হতে পারে। মাঝেমধ্যে আত্মহত্যার পাশবিক প্রবৃত্তি অন্তরে জাগ্রত হয়। কিন্তু অাস্তিকতার নোংরা নিগড়ে তা কুঁকড়ে মরে। ইচ্ছামৃত্যুও আত্মহত্যার সমার্থক। সিদ্ধান্তহীনতার সাথে সহমরণ তরুণের কাম্য হতে পারে না। তাই সত্যের জন্য, সুশাসনের জন্য অনাগত ভবিষ্যত্বের ভয়ংকর ভবিতব্য এড়ানোর জন্য অাত্মঘাতী হয়ে কুষ্ঠরোগাগ্রস্থ মনেরাভরণ ধ্বংসই উত্তম বলে জ্ঞাত হয়েছি।
খোদার কসম, একদিন না একদিন আমি পাগল হয়ে যাব। জীবনের প্রতি এতদিনের বিতৃষ্ণা, বিস্বাদ, বিরক্তি, বৈরাগ্যভাব আর অসহ্য অস্বস্তি আজ অসুস্থতায় রূপ নিয়ে বাতুলতার পথে। এই মাংসাশী মানসিকতা থেকে সাময়িক মুক্তির জন্য ভার্চুয়াল থেকে নিজেকে আপাতত বিরত রাখাই শ্রেয়। আর তাই স্বাভাবিক পড়াশোনা, সাময়িক সাহিত্যসাধনা আর স্রষ্টার নিরবচ্ছিন্ন আরাধনায় দেখি স্বস্তি ফিরে আসে কিনা। বিদায় বন্ধুগণ...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন